1. akazad7340@gmail.com : দৈনিক উত্তরের খবর : দৈনিক উত্তরের খবর
  2. info@www.dainikuttarerkhobor.online : দৈনিক উত্তরের খবর :
রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও ওয়াদাবদ্ধ: সিইসি বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক আন্দোলন রংপুর কার্যকরী কমিটি গঠিত ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবারের নির্বাচন দেশ রক্ষার নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড, মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড রংপুরে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মশিউর এখন কোটিপতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব প্রস্তাবিত কচাকাটা উপজেলা শাখার অফিস উদ্বোধন রংপুরে ধারাবাহিক কবরস্থান পরিষ্কার অভিযানে প্রশংসিত “বাংলার চোখ” কুড়িগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ আহত -৫ দেশীয় অস্ত্রসহ যুবদল নেতাসহ তিনজন গ্রেফতার সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়: মিঠাপুকুরে উৎসবমুখর পরিবেশে দিবস পালিত

রংপুরে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মশিউর এখন কোটিপতি

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে

রবিন চৌধুরী রাসেল, রংপুর।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মশিউর রহমান ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। তাঁর বাবা ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী মিশকাতুল রহমান মন্টু’র তেমন অর্থ সম্পদ না থাকলেও মশিউর রহমান চাকরির সুবাদে বনে গেছেন কোটিপতি। তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারি মাসিক ৩০ হাজার ২৪০ টাকা বেতনে চাকরি করে রংপুর নগরীতে এবং গ্রামে জমি কেনার হিড়িক ফেলেন। এ ছাড়াও রংপুর নগরীর পাইকপাড়া এলাকায় কোটি টাকায় ৪ শতক জমি ক্রয় করে সেই জমিতে বহুতল ভিত দিয়ে এক তলা বাড়িও নির্মাণ করেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর এত সম্পদ অর্জনে এলাকার মানুষ ও তাঁর সহকর্মীরা অনেকটাই অবাক হয়েছেন। অনেকেই তাঁর জমি ক্রয়ের আয়ের উৎস নিয়ে তুলছেন নানান প্রশ্ন ।

এক মাস ধরে মশিউর রহমানের আয়ের উৎস নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়। সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় দুই বছরের তাঁর ৫০০৮৮০১০১৬৪৩৭ নম্বর ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে দুই কোটি টাকা। তবে ওই হিসাব নম্বরে প্রতিমাসে তাঁর বেতনের ৩০ হাজার ২৪০ টাকা করে ঢুকেছে। দুই বছরের লেনদেন ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ২১ মে থেকে ওই বছরের ২ জুলাই পর্যন্ত, ৪০দিনের ব্যবধানে মশিউর রহমান তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা করেন ১ কোটি ৪১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে ২১ মে ৪৫ লাখ, একই মাসের ২৭ মে ৪ লাখ ২২ হাজার, ৫ জুন তিন দফায় ১ লাখ ৪ হাজার করে ৩ লাখ ১২ হাজার, ৯ জুন ২৫ লাখ ২৫ হাজার, ১১ জুন ৫ লাখ, ৩০ জুন ৯ লাখ ৪০ হাজার এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। এই ৪০ দিনের ব্যবধানে তিনি ৩২ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন। এ ছাড়াও তাঁর ওই ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ৩০ জুন দুই দফায় ৭ লাখ এবং ৩১ জুন ৩ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা করেন।
তবে আয়ের উৎসব নিয়ে মশিউর রহমানের দাবি, তিনি ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টিউশনি করিয়ে এবং গরুর খামার করে কোটি টাকা অর্জন করে ব্যাংকে রেখেছিলেন। তবে সরেজিমনে ঘুরে তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাঁর জমি ক্রয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মশিউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি কিভাবে টাকা অর্জন করেছি, তা আমার ব্যাপার। আপনাকে কে অভিযোগ দিয়েছেন? আর আপনি আমার পেছনে কেনই লাগবেন? তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সত্য হোক, আর মিথ্যা হোক যদি পত্রিকায় নিউজ করেন তাহলে আমি আপনার নামে মামলা করবো।’

জানা গেছে, মশিউর রহমানের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রুপশি ফকিরপাড়া গ্রামে। মশিউরেরা দুই ভাই। মশিউর বড়। তাঁর বাবা মিশকাতুল রহমান মন্টু ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন তিনি বয়সের ভারে চালের ব্যবসা করতে পারেন না। বাবার আবাদি জমি ছিল দেড় থেকে দুই বিঘা। এসব জমি এলাকায় বন্ধক রেখে দুই সন্তানকে লেখাপড়া করিয়েছেন মন্টু।

মশিউর রহমান ২০১২ সালের ২৬ মার্চ রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে নিম্ন সহকারী পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন। পরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি পান তিনি। এরপর উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। বর্তমানে মশিউর রহমান মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেষণে কর্মরত আছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মশিউর রহমান বিভাগীয় কার্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় নাজিরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি নাজিরের দায়িত্ব পালনকালে বিভাগীয় কর্মকর্তার চোখে ভেলকি লাগিয়ে দপ্তরের আসবাবপত্র ক্রয়সহ বিভিন্ন বরাদ্দের ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজ অ্যাকাউন্টে রাখেন। পরে সেই টাকা তুলে তিনি জমি ক্রয় করেন।

বিষয়টি তৎকালীন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন জানতে পেরে মশিউর রহমানকে ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় বদলি করেন। কিন্তু একমাসের মধ্যে তদবির করে নিজ উপজেলা মিঠাপুকুরে আসেন। বর্তমানে তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাহী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

সূত্র জানায়, মশিউর ২০২৩ সালে ২৭ নভেম্বর মিঠাপুকুরের রুপসী মৌজার ৭৫১১ দাগে ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ২৭ শতক ও রংপুর নগরীর দেওডোবা মৌজায় ২০২৫ সালের ৬ জুলাই ১০ লাখ টাকায় ৭ শতক আধাপাকা টিন সেটের বাড়ি ক্রয় করেছেন। সম্প্রতি তিনি দর্শনা শিবরাম স্কুলের পাশে ৩০ লাখ টাকায় ১০ শতক জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়াও তিনি গ্রামে চার একর আবাদি জমি কিনেছেন এবং রংপুর নগরীর পাইকপাড়া এলাকায় কোটি টাকায় ৪ শতক জমি ক্রয় করে সেই জমিতে বহুতল ভিত দিয়ে এক তলা বাড়িও নির্মাণ করেছেন বলে জানা গেছে। বিভাগীয় কার্যালয়ের তাঁর এক সহকর্মী বলেন, এখানে চাকরি করে বেতন ছাড়া তেমন আর কিছুই নাই। কিন্তু নাজিরের পদটি টাকার জায়গা। সেই পদে ছিলেন মশিউর রহমান। ওই সহকর্মীর ভাষ্যমতে, বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রতি বছর আসবাবপত্র ক্রয়ের বরাদ্দ, অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দসহ অনেক প্রকার বরাদ্দ এসে। সেই ফাইল নাড়াচড়া করতেন নাজির মশিউর। বিভাগীয় কমিশনার রদবদল হলে পূর্বের খরচ দেখিয়ে মশিউর ভুয়া ভাউচার তৈরী করে বিভাগীয় কমিশনারের স্বাক্ষর নিয়ে সরকারের কোষাগার থেকে টাকা তুলে নিজ পকেটে রাখতেন। এসব দুর্নীতি করে তিনি এখন কোটিপতি হয়েছেন। ওই সহকর্মী বলেন, মশিউরের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জুন মাস আসলে তিনি ভুয়া ভাউচার তৈরী করে সরকারের কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে তাঁর ওই নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে রাখতেন।’ তিনি যে দুর্নীতি করে কোটি টাকা অর্জন করেছেন, সহজেই সেই হিসেব মিলবে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে জুন মাসের লেনদেন দেখলে-জানালেন মশিউরের ওই সহকর্মী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মশিউর নাজিরের দায়িত্ব পালনকালে দপ্তরে ব্যাপক টাকা নয়ছয় করেছেন। বিষয়টি তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার স্যার জানতে পেরে তাঁকে এখন থেকে বদলি করেছেন।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মশিউরের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা টাকা এবং ওই তারিখে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে কোন কোন খাতে বরাদ্দের টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে তাঁর দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য।’

সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কোনো গ্রাহক ব্যাংকে অস্বাভাবিক টাকা রাখলে তা উত্তোলন করতে পারবে না। ব্যাংক কর্মকর্তার সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি বিশ্ব ব্যাংকে জানাবে। সেখান থেকে তদন্ত হবে, গ্রাহকের এই টাকার আয়ের উৎস কী। যদি বৈধ আয় না হয় তাহলে ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

কিন্তু মশিউর ৪০ দিনের ব্যবধনে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক রংপুর কর্পোরেট শাখায় জমা রাখলেন এবং তুললে নিলেন, ব্যাংক কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

সোনালী ব্যাংক রংপুর কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাবেরা সুলতানা বেগম বলেন, ‘আমার শাখায় এক লাখের ওপরে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এত সব অ্যাকাউন্ট চেক করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি কেউ অস্বাভাবিক লেনদেন করেন তাহলে অটোমেটিক বিশ্বব্যাংক জানতে পারবে।’

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হাসান বলেন, ‘মশিউর আমার দপ্তরে প্রেষণে আছেন। তাঁর বিল বেতন হয় বিভাগীয় কার্যালয় থেকে। আমার এখানে দুর্নীতি করে টাকা অর্জনের কোনো সুযোগ নেই।’

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট