রবিন চৌধুরী রাসেল, রংপুর।
দেশের ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ন্যায্য অধিকার ও পেশাগত মর্যাদা রক্ষায় এবং চলমান ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সওজ ডিপ্রকৌস এক ঘন্টা অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) অফিস টাইম ৫ টায় শেষ হলেও অতিরিক্ত ১ ঘন্টা (৫ থেকে ৬ পর্যন্ত) কাজ করেন সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা।অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের অগ্রগামী প্রকৌশল খাতকে দুর্বল করার অপচেষ্টায় এক শ্রেণীর কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় সম্প্রতি কয়েকটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন নামীয় ব্যানারে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রদান করে আসছে। তাদের কল্পনাপ্রসূত দাবি ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ভূমিকা পালন করে আসছে। একই সঙ্গে দেশের প্রকৌশল খাতের সামনের সারিতে থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা, কারিগরি দক্ষতা, আত্মত্যাগ ও নিরলস শ্রম দিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীগণ যে অবদান রেখেছেন, তার ফলেই আজকের দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আন্দোলনরত কিছু শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অবদানকে অবজ্ঞা করে অশালীন আচরণ ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করেছে, যা প্রকৌশল সমাজে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অপ্রত্যাশিত কর্মকান্ড প্রকৌশল অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি দেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে। রাষ্ট্র নির্ধারিত কাঠামোর আলোকে যখন প্রকৌশল খাত সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে চলেছে। তখন তাদের এই অযৌক্তিক আন্দোলন নিঃসন্দেহে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অনেকেই মনে করছেন। আমরা এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি এবং তাদের অযৌক্তিক ও অন্যায্য ৩ (তিন) দফা দাবিকে ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। একই সাথে, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের উত্থাপিত ৭ (সাত) দফা দাবি দেশে দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন ও টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমরা উত্থাপিত ৭ (সাত) দফা দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাজীবী ও ছাত্র শিক্ষকদের ৭ দফা দাবি- ১, প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভাগ করে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১০ম গ্রেডভুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদ শুধুমাত্র বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর আওতাধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে উত্তীর্ণ ৪ বছর মেয়াদি (সার্ভেয়িংসহ সকল টেকনোলজি) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণের জন্য সংরক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে। ২, সরকারি আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ কোম্পানির জনবল কাঠামোতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের হার ১:৫ করা। যা বর্তমানে অশুভ চক্রের কারণে ৫:১ এ রূপান্তরিত করার পাঁয়তারা চলছে। ৩, সকল প্রকৌশল সংস্থায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে বিদ্যমান ৩৩% পদোন্নতির বিধান ৫০% এ উন্নীতকরণ এবং সকল প্রকৌশল সংস্থায় প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার হতে নিয়োগ প্রদান করা। ৪, মেধার অপচয় রোধে প্রকৌশলীদের কারিগরি ক্যাডার ব্যতিত অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বন্ধসহ প্রকৌশল পেশা পরিবর্তন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ৫, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের গুণগত মান রক্ষার্থে কোর্স কারিকুলাম ইংরেজিতে প্রণয়নসহ আধুনিকায়ন করা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার ১:১২ নিশ্চিত করে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব/ওয়ার্কসপ আধুনিকায়ন এবং কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংযুক্ত এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইন্সট্রাক্টরকে সহকারী প্রধান শিক্ষক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ও সংযুক্ত এসএসসি (ভোকেশনাল), দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্টের কাচাঁমাল, শিক্ষার্থী ভাতা ও প্রশিক্ষক ভাতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বরাদ্দ দিতে হবে। ৬, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। ৭, "কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ" কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা দাবী বাস্তবায়নসহ সকল প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের ভর্তির সুযোগ প্রদান করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি (সড়ক বিভাগ) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত অধিকার সংরক্ষণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পেশাজীবী কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে নির্ধারিত সময়ের পর একঘন্টা অতিরিক্ত কাজ করি।ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বিশ্বাস করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ডিপ্লোম প্রকৌশলী সদা প্রস্তুত। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পজিটিভ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমাদের দ্রুত সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হোক এবং ডিগ্রি প্রকৌশলীদের অনৈতিক তিন দফা দাবি বাতিল করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা করা হোক। দেশ গঠনের হাতিয়ার একমাত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি (সড়ক বিভাগ) সভাপতি মোঃ কামাল পাশা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে সারাদেশে সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নির্ধারিত সময়ের পর একঘন্টা অতিরিক্ত কাজ করে। কোন ধরনের বৈষম্যকে আমরা প্রশ্রয় দিব না। কিন্তু, আমরা আন্দোলন করে নয়, আমরা কাজ করে, কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে দিয়ে যেতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য।