জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, যদি দেশের স্বার্থে সংবিধানের কোনো পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে সেটা নির্বাচিত সরকারই করবে।
রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জিয়া পরিষদ রিকশা ও ভ্যানগাড়ি চালকদের মধ্যে বৃষ্টির পোশাক বিতরণ অনুষ্ঠানে’ তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৫ আগস্টের মাধ্যমে আমরা যে অর্জন করেছি, সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। গত ১৬ বছর ধরে একটি দানবীয় সরকারের রোষানল ও নিষ্ঠুর নিপীড়নের মধ্যে এ দেশের মানুষ দিন কাটিয়েছেন। সেই সরকার যাতে আর ফিরে না আসে, সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি করে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সুযোগ যেন তৈরি না হয়।
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে এই জাতিকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। তখন দেশে কোনো আইন-কানুন ছিল না, কোনো ন্যায়বিচার ছিল না। শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তারা আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একের পর এক রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে।’
‘দেশে এমন এক রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল, শেখ হাসিনা, তার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন ছাড়া কেউ কথা বলতে পারতেন না। যা ছিল হিংসা ও রক্তপাতের রাজত্ব। আপনারা যদি সেটার পুনরাবৃত্তি না চান, তাহলে সবাইকে অন্তত ন্যূনতম একটা বোঝাপড়ার মধ্যে আসতে হবে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এটা যদি না করতে পারেন, তাহলে আবারও ভয়ঙ্করভাবে ফ্যাসিবাদ উঁকি দিতে পারে। শেখ হাসিনা কতখানি প্রতারক হলে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসে নিজেই সেটা বাতিল করে দিয়েছে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনা, যার কোনো অঙ্গীকার নেই, যে রাজনীতিকে মনে করে প্রতারণা ও উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যম। আমরা দেশে সেই রাজনীতি ফেরত আসতে দিতে পারি না।’
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ। তাদের কাছে মানুষের অনেক দাবি-দাওয়া ও প্রত্যাশা রয়েছে। সেগুলো পূরণে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই, কিন্তু এখন মুদ্রাস্ফীতি অনেক কমে এসেছে, জিনিসপত্রের দাম না কমলেও অন্তত বাড়ছে না। কিন্তু কর্মসংস্থান তো হচ্ছে না। একের পর এক মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান না থাকলে দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হয়।
‘দুয়েকজন উপদেষ্টা হয়তো হাঁসের মাংস খেতে পারবেন যেকোনো জায়গায়। কিন্তু জনগণ তো আর হাঁসের মাংস খেতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্ট খাত থেকে এক লাখ লোকের চাকরি চলে গেছে। কারণ, ফ্যাসিবাদের পূজারীদের অনেকেই মিলমালিক। আমরা আগেও বলেছি, কলকারখানা যেন বন্ধ না হয়, মানুষের ক্ষুধা যেন না বাড়ে। মানুষের ক্ষুধার সঙ্গে রাজনীতি করা যাবে না। দরকার হলে সরকার এসব কারখানা নিলামে বিক্রি করে দেবে অথবা প্রশাসক দিয়ে চালাবে। কিন্তু কর্মসংস্থান যেন ঠিক থাকে, সরকারকে সেই চেষ্টা করতে হবে।
‘জুলাই সনদের জন্য আইন বা সংবিধান সংশোধন করতে হলে সেটা নির্বাচিত সংসদই করবে। একটি রাজনৈতিক দল বলছে আগেই গণভোট দিতে হবে—কেন? যদি মূলনীতিতে কোনো পরিবর্তন করতে হয়, মূলনীতি একটি অখণ্ড বিষয়। তারপরও সংবিধানের বিধান অনুসারে সংশোধন করা যায়। কিন্তু সেই সংশোধন করবে সংসদ,’ যোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা যেমন গায়ের জোরে চালিয়েছেন যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার মতের মিল হয়নি, তাই গোয়েন্দা সংস্থা পাঠিয়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। সেই ধরনের আলামত এখন কেন থাকবে? আমরা তো এমনটা করতে পারি না। কাজেই সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার তৈরি করুন। তারপর গণতন্ত্রের স্বার্থে যদি সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তারা সেটা করবে। এটা তাদের দায়িত্ব।