রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নে আলদাদপুরে হিন্দু পাড়ায় ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় পাঁচজনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে গঙ্গাচড়ায় গ্রেপ্তারদের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৃষ্ণ কমল রায়ের আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠান।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ি মাঝাপাড়া গ্রামের লাভলু মিয়ার ছেলে ইয়াসিন আলী (২৫), একই উপজেলার মাগুরা ধনীপাড়া গ্রামের নুর আলমের ছেলে মোহাম্মদ স্বাধীন মিয়া (২৮) দক্ষিণ চাদখানা মাঝাপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে আশরাফুল ইসলাম(২৮) উত্তর সিংগের গাড়ি পাঠানপাড়া গ্রামের বাবুল খানের ছেলে এম এম আতিকুর রহমান আতিক(২৮) এবং সিঙ্গের গাড়ি চাওড়া পাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন সেলিম (২২)।
কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, ২৭ জুলাই গঙ্গাচড়ায় মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির প্রতিবাদে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তৎক্ষণাৎ পুলিশ অভিযুক্ত রঞ্জন কুমার রায়কে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠায়। এরপরে কিছু উত্তেজিত লোকজন একত্রিত হয়ে হিন্দু পল্লীতে হামলা চালিয়ে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় ২৯ জুলাই রাতে ক্ষতিগ্রস্ত আলদাদপুর এলাকার ছয়ানি পাড়ার দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে রবীন্দ্রনাথ রায় (৫৫) গঙ্গাছড়া মডেল থানায় অজ্ঞাত ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় যৌথবাহিনী সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে পাঁচজন অভিযুক্তকে আটক করে। বিচারক ঘটনার পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাছড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল ইমরান জানান হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ১০০০ থেকে ১২০০ আসামি উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রবীন্দ্রনাথ রায় যে মামলাটি করেছেন ওই ঘটনায় রাতেই পাঁচজনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে গত রবিবার সন্ধ্যায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপরই প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান, হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হবে। অযথা কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে না বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, গঙ্গাচড়া উপজেলায় হিন্দুপল্লীর বাড়িঘর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল থেকে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সেনা এবং পুলিশ সদস্যরা তদারকি করছেন বলে তিনি জানান।